করোনা ভাইরাস সংক্রমনরোধে নারায়ণগঞ্জে পৃথক দুইটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন প্রস্তুত করা হচ্ছে। একটি শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ভবনে ৫০ শয্যার প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। অপরটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর এলাকায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সাজেদা জেনারেল হাসপাতালকে পুরোপুরিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইন করার প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে হাসপাতালটির মালিকপক্ষের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
করোনা প্রতিরোধে ঘোষিত কমিটির নের্তৃবৃন্দকে নিয়ে সোমবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক বৈঠকে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী শহরের ১০০ শয্যার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি জানান। পাশাপাশি কাঁচপুরে সাজেদা হাসপাতালে ৫০ শয্যার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহম্মেদ।
সোমবার (২৩ মার্চ) সকালের দিকে মেয়রের কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নিজেই। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) আবুল আমিন।
এর আগে মেয়র আইভীকে প্রধান করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট সিটি করপোরেশন এরিয়ার জন্য করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা আবুল আমিন, ৩শ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. মো. আজগর হোসেন, জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান ফারুক, জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহম্মেদ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান সরদার, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বসির উদ্দিন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহীন্দ্র কুমার মন্ডল, সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শেখ মোস্তফা আলী।
এদিকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে করোনা মোকাবেলায় নানা ধরণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানান প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা আবুল আমিন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০ হাজারের মত সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেছি। এর সাথে ৫ হাজার স্টিকার, ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। এছাড়াও ওয়েবসাইট ও ফেসবুকেও সিটি করপোরেশন থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আবুল আমিন আরো জানান, নগরীর জনবহুল জায়গাগুলোতে যেমন-লঞ্চঘাট,শহীদ মিনার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা ক্লোরিন মিশ্রিত পানি ছিটানোর কার্যক্রম চলছে। করোনা ও ডেঙ্গু মোকাবেলার জন্য ওয়ার্ড পর্যায়ে আমরা সমন্বয় কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এছাড়াও পুরাতন কোর্ট ভবনে প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টাইনে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট করার জন্য কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের বলে দিয়েছি তাদের ওয়ার্ডে আগত প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে কিনা সেটি নিশ্চিত করার জন্য। সকল শ্রেণির সবধরনের মানুষের সহযোগিতা ছাড়া এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রেণে আনা কঠিন।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ৩২ জন বিদেশ ফেরতের তালিকা আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে ৪ জনকে আমরা ট্রেস করতে পারিনি। আমাদের সিটি করপোরেশন এড়িয়া হলো ৭২.৪৩ বর্গকিলোমিটার। এর বাইরে বিপুল পরিমাণ জায়গা রয়েছে যা সিটি করপোরেশনের বাইরে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা তিন অঞ্চলকে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি তারা ওয়ার্ড পর্যায়ে খুজে বের করবে বিদেশ প্রবাসীদের। যাতে করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।
সিটি কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসার মোস্তফা আলী বলেন, আমরাও শুনতে পেরেছি নারায়ণগঞ্জে ৫ হাজারের অধিক বিদেশ ফেরত রয়েছেন। কিন্তু সিটি করপোরেশনের জন্য যে তালিকা দেওয়া হয়েছে সেখানে ৩২ জনের তালিকা রয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো.আলমগীর হিরণ জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে শহরের নগরীর রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্টেশন, লঞ্চঘাট, শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন জনবহুল স্থানগুলোতে জীবাণুনাশক ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত (ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ও ক্যালসিয়াম হাইপো- ক্লোরাইড) পানি নিয়মিত স্প্রে করছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)। তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থানে নাসিক। প্রতিদিন সকাল থেকে কয়েক দফায় পরিচ্ছন্নতায় নাসিকের ১৬০ জন কর্মী জনবহুল স্থানগুলোতে জীবানুনাশক ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি স্প্রে করছে। শহরের রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্টেশন, লঞ্চঘাট, শহীদ মিনার এলাকাসহ জনবহুল স্থানগুলোতে জীবানুনাশক স্প্রে করার কাজে ৪০ জন কর্মী নিয়োজিত রয়েছে। প্রতিদিনই এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহম্মেদ বলেন, ৫ হাজার বা সাড়ে ৫ হাজারের যে তালিকার কথা বলা হচ্ছে সেটি মূলত মার্চের শুরুর থেকে। মার্চের ১ ও ২ তারিখে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী এসেছেন। ১৪ ও ১৫ তারিখের দিকে ইতালি ফেরত যারা আছেন তাদের বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছি। আমার কাছে সিটি করপোরেশন এলাকার তথ্য হোক আর যাই হোক তথ্য পাওয়ার সাথে সাথেই আমরা তাদের কোয়ারেন্টাইন করতেছি। ২০ লিটার পানিতে ২০০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে জনবহুল যেসব জায়গা রয়েছে সেসব জায়গায় ছিটানো হচ্ছে।